ফেনীতে স্বর্ণ ডাকাতির মামলায় ডিবির ওসি মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ ছয় পুলিশের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। বুধবার রাত থেকে গ্রেফতার সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। রিমান্ডে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে বলে জানা গেছে। এর আগে বুধবার দুপুরে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ খান ওসি মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়ার চার দিন ও পাঁচ পুলিশ সদস্যের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

মঙ্গলবার রাতে ব্যবসায়ী গোপাল কান্তি দাস বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ফেনী মডেল থানায় ডাকাতি মামলার পর পুলিশের বিশেষ দল ওসি মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়ার বাসা তল্লাশি করে ১৫টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করে। স্বর্ণের বার আত্মসাতের ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মো. সাইফুল ইসলামসহ ছয় পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার (এসপি) খোন্দকার নূরুন্নবী।

ডিবির ওসি হওয়ার পর থেকে মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া ফেনী কন্ট্রোলরুমের ইনচার্জ হিসেবে এক বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেন। চলতি বছরের ৯ মে তৎকালীন ডিবির ওসি এএনএম নুরুজ্জামানকে ফুলগাজী থানায় বদলি করা হয়। পরে ডিবির ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয় মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়াকে। মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া ডিবির ওসি হওয়ার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তার অপকর্মের সহযোগীরা হচ্ছেন— এসআই মোতাহের হোসেন, এসআই মিজানুর রহমান, এসআই নুরুল হক ও এএসআই অভিজিত বড়ুয়া।

তারা দীর্ঘদিন ধরে ফেনী গোয়েন্দা পুলিশে কর্মরত থাকার সুবাদে একের পর এক অপকর্ম করে যাচ্ছেন। গত জুন মাসের শেষ দিকে ফেনীর সুলতানপুরের কৃষক সবুজ মিয়ার চারটি গরু চুরি হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বিভিন্ন স্থানে খোঁজখবর শেষে ওসির মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়ার গ্রামের বাড়ি চিরড়া এলাকার দুই গরু চোরকে ডিবি পুলিশ আটক করে অফিসে এনে তাদের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন বলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক অভিযোগ করেন। ফুলগাজীর আনন্দপুর ইউনিয়নের জামমুড়া গ্রামের কৃষক জব্বর আলি (চদ্দনাম) জানান, ২৫ জুলাই সাদা পোশাকে ওসি মো. সাইফুল ইসলাম ডিবি পুলিশের গাড়ি নিয়ে এলাকায় আসে।

এ সময় তার সঙ্গে গরু ব্যবসায়ী হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফেনী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালামকে তিনি দেখেছিলেন। ওই গাড়িতে থাকা সবার পরনে ছিল সাদা পোশাক। কৃষক বলেন, ওসি মো. সাইফুল ইসলামকে চিনতাম না, স্বর্ণ চুরির ঘটনার খবর বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রিকায় ছাপা হয়। সেখানে তার ছবি দেখে পরিষ্কার হয়েছি আবুল কালামের সঙ্গে যাকে দেখেছিলাম তিনি ডিবির ওসি।

উত্তর শশর্দী গ্রামের চা দোকানি কুদ্দুস ও স্থানীয় যুবলীগের একাধিক নেতা বলেন, ওসি মো. সাইফুল ইসলাম ডিবি পুলিশের গাড়ি নিয়ে নিয়মিত এ এলাকায় এসে মানুষকে হেনস্তা করতেন। আটক করে গাড়িতে বসিয়ে রেখে টাকা নিয়ে ছেড়ে দিতেন। তাদের অভিযোগ, ওসি মো. সাইফুল ইসলামের বিশ্বস্ত ছিলেন এসআই নুরুল হক। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। নুরুল হকের বাড়ি কোম্পানীগঞ্জে।

২০১২ সালে ফেনী মডেল থানায় সেকেন্ড অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া। দায়িত্ব পালনকালেও তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। ২০১২ সালের মে মাসে ফেনী মডেল থানার সামনে পুলিশের স্থাপনা ভাঙার সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর হামলা করে মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ।